Saturday, October 4, 2014

গরুকাহিনী

লিকলিকে, হাড় জিরজিরে, পাছা সরু;
কিনেছি রে ভাই এক খানা দেশী গরু।।

ভাবতেছিলাম ছোটখাট দেশী পশু, তেমন জ্বালাবে না। গোল গোল চোখ দিয়া ড্যাব ড্যাবাইয়া তাকাইয়া মায়া বাড়াবে। বাড়ি নিয়া গিয়া - গোসল দিয়া ঘাস পাতা খাওয়াবো। ভুষি মাড় ইত্যাদি দিয়া যত্নআত্তি করবো। খড়বিচুলি মুঠি কইরা নিয়া নিজের হাতে খাওয়ায় দিবো - একটা মহেশ মহেশ ভাব আসবে। গফুরের মতো মনটা আর্দ্র হইয়া উঠলো - নিজের মধ্যে বেশ গফুর গফুর একটা ভাব চইলা আসছিল।

প্রথম কিছুটা পথ গরু সাব বেশ ভালোই ছিলেন। নিতান্ত শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট নিরীহ প্রাণী। অবলা অবলা দৃষ্টিতে তাকায়। তাড়া দেয়া লাগে না, নিজেই সাথে সাথে চইলা আসে। মাঝপথে পেছন থেকে একটা গাড়ির বেমক্কা প্যাপ শুনে এক লাফে গরু নিজেই গাড়ি হইয়া উঠলো।

ভাই রে ভাই! গরু কিনছি না ঘোড়া কিনছি - সেইটা বুঝার আগেই পঙ্খীরাজের গতি লইলো গরু ডা!! নিজেরে সামলামু নাকি গরু সামলামু - লগের লোকজন আগেই পিছায় পড়ছে। কিন্তু হৃদয়ে সদ্য জাগা গফুর হাতের দড়ি ছাড়লো না। (আসল কথাঃ হাতে দড়ি প্যাঁচায় গেছিলো।)

ম্যালা কষ্টে এবং ভারী শরীরের গুণে লিকলিকে গরু তথা পঙ্খীরাজটারে থামাইলাম (জীবনে পরথম এই অধমের বেশি ওজন কুনু কাজে আসিলো!)। ইতিমধ্যে সাথের লোকজন হুড়মুড় কইরা আইসা দড়ি হাত থেকে নিয়া এই ধাওয়া খাওয়া গফুররে রেহাই দিলো।

পিতাজি জ্ঞান দিলেন, "জানের চে গরুর দাম বেশি না রে ব্যাটা!! এমনে গরুর সাথে কেউ দৌড়ায়?!" এখন বাপেরে তো আর বলা যায় না যে গরুর দড়ির আরেক মাথায় প্যাঁচ খাইছিলাম। এমনেই গরু গরু কয়, এরপর কইবো হাটে গেছিলাম একটা গরু আনতে - আনসি এক দড়িতে দুই গরু; একটা মোটা আরেকটা সরু!! ;)

গরুটার জন্য মায়া লাগতেছে, কোন গফুরের আঙ্গিনা - গোয়াল খালি কইরা নিয়া আসলাম কে জানে?! হয়তো সন্তানসম যত্নে পালতো গরুটারে। গরুটারে গোসল দিয়া খাওয়াইলাম। একটু দুষ্ট পোলাপাইনরে মা বাপ ক্যান বেশি ভালবাসে সেইটার এক কণা বুঝলাম। ভালো জ্বালাইছে তো, আবার ঠাণ্ডা হইয়া পাশেও ঘেঁষতেছে। আদর এ পাইবে না তো কুন গরু পাইবে?! ছোটবেলার কথা মনে পড়লো, একসময় গরু দেখলেই মহেশ মহেশ লাগতো। প্রায়ই কোরবানির আগে ভাবতাম, এই গরুটারে কোরবানি না দিলে হয় না?! অনেকদিন পর আবার সে রকম মনে হইলো!!

মহেশ মহেশ ভাবওয়ালা গরুটার পাশে নিজেরে গফুর গফুর লাগতেছে।
তা লাগুক, তবু গৃহীত হউক এই আত্মত্যাগ।

Friday, October 3, 2014

ছাগভাষা সমাচার কিংবা একটি ফাঁপরের গপ্প

অতঃপর ছেলেটি বলল তাঁর লেখা নাকি অনেক পত্রিকায় যায়, অনেক লোক সেটা নকল করে চারটে খায়। ফাঁপরে অস্থির এক ভাই পত্রিকার একটা লেখা দেখতে চাইলে অবশ্য ছেলেটি "অনেক পত্রিকায় আসে - নির্দিষ্ট করে মনে করা কঠিন" ইত্যাদি বলে দিল।

কপালফেরে কিংবা ভাগ্যদোষে খোমাবইয়ে ছেলেটির কিছু চর্বিত চর্বণ ধাঁচের লেখা দেখেছিলাম। তার জেরে এই অধমকেই সাক্ষী মেনে বসলো ছেলেটি। কান চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দিলাম, "ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁ, ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁহ..."

আড্ডার সবাই হাত পা ঝাড়া দিয়ে এই দিকে ফিরলো। চোখেমুখে কৌতুক কিংবা কৌতূহলের ঝিলিক। ঘটনা কি, জানতে উৎসুক সবাই। সবার আগ্রহ দেখে খেই হারিয়ে ফেলা ফাঁপরা ছেলেটি আবার সাক্ষ্য দিতে বলায় আবার বললাম, "ম্যা.. ম্যাঅ্যাঁ... ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁহ...."

এক ভাই ঘটনা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো, "হইলো কি তোমার?!"

বললাম, "ভাই ছাগলরে ছাগলের ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করতেছিলাম যে ফাঁপর টাপর ফোকলা ফোঁপরে এই অধম নাই! এখন ছাগলের ভাষা বিশেষ না জানায় ওই ম্যা ম্যা দিয়াই কাজ চালানোর চেষ্টা করতেছি।"

এই বলেই আবার ফাঁপরা ছেলেটির দিকে ফিরে বললাম, "ম্যাঅ্যাঁ, ম্যাঅ্যাঁহ, ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁহহ..."
এতক্ষণ সবাই ফাঁপরের গুমোটে হাঁসফাঁস করছিল, এবারে সম্মিলিত নির্মল হাসিতে সে গুমোট কেটে গেল।

এইটা বেশ কিছুদিন আগের কথা। আজ পর্যন্ত পত্রিকা বা কোথাও (খোমাবই বাদে) কোন লেখা ফাঁপরা ছেলেটি দেখাতে পারে নি। সকাল থেকে নীচে দুই জোড়া ছাগলের মিলিত ডাকাডাকিতে ঘুমের দফা রফা। একবার মনে হয়েছিল ছাগলের ভাষা জানা থাকলে খানিক কষে বকে দিতাম। এরপরই মনে পড়লো সেইদিনের ফাঁপরা ছেলেটির কথা.. বিরক্তি নিমেষে উধাও হয়ে মুচকি হাসিতে দিন শুরু হলো...

Monday, September 29, 2014

একটি ফেসবুকীয় কঠিন গপ্প

এক সুশ্রী বালিকা ভিতরকার বাক্সে (ইনবক্সে) তাহার গোসলখানায় (বাথরুমে) স্বহস্তে গৃহীত খোমাছবির সূত্র (সেলফি, প্রোফাইল পিকের লিঙ্ক) দিয়া কহিল, ক্যামন হইয়াছে তাহা যেন বলিয়া উহারে ধইন্ন করি।

মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে বুঝিলাম, বালিকা একটি পছন্দ (লাইক) চাহিতেছে।

কিন্তু পছন্দ (লাইক) তো আর ব্যাংকনোটের মতন নয় যে লিখা থাকিবে - চাহিবামাত্র বালিকাকে দিতে বাধ্য থাকিবো। অতএব কথা ঘুরাইলাম। কহিলাম, চিত্র ভালোই হইয়াছে। কেবল চিত্রগ্রহণে বিচিত্রতা নাই! বালিকা শুনিয়া আর কিছু কহিল না। ভাবিলাম, বাঁচিয়াছি।

কিন্তু কিসের কি?! কিছুক্ষণ পর বালিকা নতুন এক খোমাচিত্র আরও বিচিত্র ভঙ্গিতে ধারণ করিয়া তাহা কিরূপ হইয়াছে জানিতে চাহিলো। মনে মনে প্রমাদ গুনিলাম। প্রকট সংকটেই কট খাইয়াছি।

এদিকে বালিকা তো নাছোড়, খোমাচিত্র কিরূপ হইয়াছে - আর কিরূপে তুলিবে - কোন কোণা দিয়া তুলিলে আরও উত্তম দেখাইবে ইত্যাদি নানাবিধ মিষ্ট জিজ্ঞাসায় অধমকে অতিষ্ঠ করিয়া তুলিয়াছে।

বালিকা যাহা বলে তাহাতেই হু হ্যাঁ করিয়া দিব্যি সারিয়া যাইতেছিলাম বলিয়াই কিনা জানি না, বালিকা এবারে চক্ষুর মাথা খাইয়া তাহার খোমাচিত্রে পছন্দ চাহিয়া বসিলো। এতক্ষণ হু হ্যাঁ করিতেছিলাম, এইবারে তাহার সহিত আমতা আমতা লাগাইলাম। তদুপরি বালিকার কুনু মায়া দয়া নাই, তাহার এক্কখানা পছন্দ চাইই চাই।

এইবারে মোক্ষম চাল চালিলাম। কহিলাম চিত্র সুন্দর, চিত্রের বিষয়বস্তুও সুন্দর। তবে কিনা চিত্রের গ্রহণযন্ত্র (ক্যামেরা) উত্তম নহে। তাই চিত্র পছন্দযোগ্য হয় নি। কিন্তু এই বয়ানেও বালিকার মন গলিল না, বালিকা তাহার পছন্দ আদায় করিতে দৃঢ়সংকল্প। সে পুনঃপুনঃ পছন্দ দাবী করিতে লাগিলে, বার্তা অদেখা রাখিয়া কাটিয়া পড়িলাম।

কিছু পরে আবার আসিয়া দেখিলাম, বালিকা খোমাবই থেকে অধমরেই কাটিয়া দিয়াছে। অনুরোধের ঢেঁকি না গিলিবার খুশীতে নীচে নামিয়া দুটাকার চর্বণযোগ্য চোষ্যবস্তু (চুইংগাম) কিনিয়া খাইলাম। মুড়ি কিনিতে চাহিয়াছিলাম, কিন্তু ধারে কাছে মুড়ি বিক্রেতা না পাওয়ায় উহা আর আজি খাওয়া হইলো না।

পুনশ্চঃ
১) এক বন্ধু অনুরোধ অনুযোগ করেছিল, খোমাবইয়ে হালকা পাতলা নয় বরং কঠিন-জীবনমুখী-বাস্তবসম্মত এবং মজার কিছু লিখতে। খোমাবইয়ে জীবন পাঠ নিয়ে তো তেমন কিছু পাই নি। সেজন্য যেটাতে মজা পেয়েছি তাই দিলাম কঠিন খাস্তা গুরুচণ্ডালী ভাষায়। (দৌড় যে অদ্দুরই) ;)

২) ভালো লাগলে এমনিতেই লাইক দেই। লাইক নিয়া বাড়িও করবো না - কব্বরেও যাব না। তাই আঁতকা অনুরোধের আগে ভেবে দেখাবেন আপনার ঢেঁকিখানা গেলার মতো কি না। নতুবা এই অকম্মার ঢেঁকিকে লাইক দেন বলে আতংকে ফেলে দেবেন না। (এইটা বিশেষ শ্রেণীর জন্য; ওই যে আছে না?! লাইক মি - লাইকু জাতীয়) ;)

Wednesday, June 25, 2014

শাস্তি

রহমান সাহেবের বয়স হয়েছে। এখন আর গায়ে আগের মতো তেমন জোর নেই। তবে মাথায় কূটবুদ্ধির মাশাল্লাহ কমতি নেই, বরং ম্যালাদিনের অভিজ্ঞতায় তা আরও ঋদ্ধ হয়েছে। যৌবনের আকাম কুকামগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো রক্তচাপ বেড়ে যায় রহমান সাহেবের। কি সব দিন ছিল সেগুলো.. মাঝে মাঝে ওসব ভেবে পুলকিত হন তিনি। নেহায়েত বয়েস হয়ে গেছে বলে আফসোস যে হয় না, তা নয়। তবে এখনকার কাজগুলো হয় নিখাদ বুদ্ধির.. কাঁচাবয়সের কাঁচাকাজ নয়। এই ভেবে তৃপ্ত থাকেন তিনি।

একমাত্র ছেলে নিজাম বিদেশ থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছে বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য। ছেলের বউ আর ছোট্ট নাতিকে নিয়ে বিপত্নীক রহমান সাহেবের সুখের সংসার। এর মধ্যে একদিন নিজাম থমথমে মুখে অবেলায় ফিরে আসে কর্মস্থল থেকে। কি এক কাগজ হাতে বাবার সামনে গিয়ে জানতে চায়, মতির মা কে? কি তার মেয়ের বৃত্তান্ত? মতির আদ্যোপান্ত জানার আগ্রহ নিজামের। রহমান সাহেবের রক্তচাপ বেড়ে যায়, তিনি নিরুত্তর থাকেন। অসুস্থতার ভান করে এড়িয়ে যেতে চান নিজামকে। কিন্তু নিজাম হাল ছাড়ে না, সে উত্তর খুঁজতে থাকে।

"মতির মা" নাম শুনেই রহমান সাহেবের মনে পড়ে যায় অনেক বছর আগের কথা। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, একটা ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার বিপুল প্রতাপ। মতি ছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। সাধারণ ছাত্রদের অধিকার চাইবার অপরাধে(!) তিনি মতিকে খতম করার নির্দেশ দেন। আর তার সাথে খুনের চাক্ষুষ সাক্ষী আর উপরি পাওনা হিসেবে ভোগে যায় মতির ছোটবোন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় মেয়েটিকে। বিধবা মতির মা বাড়ীর পাশে ছোট্ট একটা মুরগীর খামার করে সংসার চালাতেন। চরম আক্রোশে সেটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সব হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিল মতির মা। পুরো বিষয়টাই রহমান সাহেব টাকা আর রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নিজেদের করা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগকে বানিয়ে ফেলেছিলেন সাধারণ হানাহানির মামলা। আর এই চরম অপরাধগুলোকে তিনি বলেছিলেন মতিদের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। ঘোষণা দিয়েছিলেন, অচিরেই চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করে ব্লা ব্লা ব্লা... ব্লা ব্লা ব্লা...

হালে সেই অপরাধের কিছু প্রমাণ কিভাবে কিভাবে যেন বেরিয়ে এসেছে। নিজাম সেগুলোরই কিছু জানতে পেরেছে। কিছু সচেতন মানুষও জানতে পারে এই অন্যায়ের কথা, অতঃপর শুরু হল মামলা। রহমান সাহেব সুতো টানলেন। মামলা ঝুলে গেল। তবে মানুষ আর আগের মত দমে গেল না। কিছু মানুষ জেগে উঠলো, প্রতিবাদ করলো। গিয়ে দাঁড়ালো সব হারানো মতির মার পাশে। রহমান সাহেবের শত প্যাঁচেও সেটা দমলো না। এভাবে না পেরে রহমান সাহেব মোক্ষম চাল চাললেন। নিজের শয়তানি বুদ্ধির সবটুকু আর বিপুল অর্থ খরচ করে তিনি মামলা ঝুলিয়ে দিলেন অনির্দিষ্টকালের জন্য।

নিজাম গোছগাছ করছে, সে চলে যাবে দেশ ছেড়ে চিরতরে। নিজামের স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে বিদায় নিতে গেছে, নিজাম তাকে সেখান থেকেই তুলে নেবে বিমান বন্দরের পথে। বের হবার আগে পথ আগলে দাঁড়ালেন রহমান সাহেব, তার রক্তচাপ বেড়ে গেল। তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন, নিজামকে তার পাশে থাকতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু নিজাম শুনলো না, সে এভাবেই শাস্তি দেবে তার আপাদমস্তক অপরাধী বাবাকে। ফাঁসি তো তার এখতিয়ারে নেই, তাই সে দেবেঃ পরিবার-পরিজনহীন যাবজ্জীবন।



কৈফিয়তঃ এমনিতেই আবর্জনা জাতীয় গল্প লিখি। কিন্তু তারপরেও এই লেখাটা কেন জানি আরও বেশি আবর্জনাময় হইছে। এ পর্যন্ত এতোটা আবর্জনাময় কিছু আর লিখি নাই। জীবিত বা মৃত নির্বিশেষে, বিশেষত মতিউর রহমান নিজামী কিংবা তাহার রক্তচাপের সাথে এই গল্পের কোথাও কোন সম্পর্ক নেই। যদি এই আবর্জনার ভেতরে কেউ মতিউর রহমান নিজামী অথবা তাহার রক্তচাপ সম্পর্কিত কিছু খুঁজে পায় তবে সেইটা একান্তই কাকতালীয় বিষয় আশয়। এতে এই আবর্জনার মালিকের কোথাও কোন প্রকার কৃতিত্ব নাই।
কৈফিয়তটি শেষ হলো।।

Sunday, June 15, 2014

দিবস এক দিনের, আর বাবা সারাজীবনের

অনলাইনে এসে জানলাম আজ বিশ্ব বাবা দিবস।
তো বাবার সাথে চিরকালই অধমের ভালো বাঁশা বাঁশির সম্পর্ক।
মানে উনি ভালো ভালো বাঁশ দেন, আর অধম অধোবদনে লই।
এই আর কি বিষয়টা!!

যাই হোক,
আজ ভাবলাম বাবারে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা টুভেচ্ছা জানাই!
আর কতকাল ক্ষ্যাত থাকবো!! এট্টু আধটু আধুনিক না হয় হলাম।
গিয়ে দেখি, সারাদিন খাটা খাটুনির পর আব্বু চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছেন।
সামনে দাঁড়িয়ে একটু গলা খাঁকারি দিলাম, বাপে চোখ তুলে তাকালেন।

ক্লান্ত জিজ্ঞাসু লাল লাল চোখের সামনে গুলিয়ে ফেললাম।
কি বলবো কি বলবো না, কই যাব আর কই যাব না।
সব মিলিয়ে হয়ে গেল পদ্মা মেঘনা যমুনা।

জিজ্ঞেস করে বসলাম,
"আব্বা, ক্যামন আছেন?! মানে, ভালো আছেন?!"

নগদে বললেন, "ভালো আছি, আপনি ভাত খাইছেন? বাবা?!"
সব গুলিয়ে টুলিয়ে ভালো একটা বাঁশের প্রত্যাশায় ছিলাম,
এইরকম অসীম ভালোবাসার দুরাশা কস্মিনকালেও করি নাই।
ফের ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। কোনমতে, চিবিয়ে চাবিয়ে বললাম,
"জি খেয়েছি, আপনি খাইছেন?!"

আব্বা এবার অসম্ভব নরম স্বরে বললেন,
"হ্যাঁ, খাওয়া হইছে, ভালোও আছি।
যান বাবা, ঘুমাইতে যান। রাত হইছে।"

মুহুর্তেই বুকের ভিতরে সব ভেঙ্গে চুরে একটা নদী তৈরী হলো,
হয়েই নদীটা কুলকুল করে বয়ে যেতে লাগলো।
আর এক টুকরা আকাশ তৈরী হলো, আকাশ ভরা জ্যোৎস্না।
সেই জ্যোৎস্নায় ভিজে ভিজে নদীর তীর ধরে ফিরে আসলাম।
ইসস, ভালোবাসা এতো সুন্দর হয় ক্যান গো মাবুদ?!

জানাতে গিয়েছিলাম এক চিমটি শুভেচ্ছা,
সেইটা না দিয়েও বরং নিয়ে ফিরে এলাম
এক আকাশ নদী জ্যোৎস্নাসমেত অসীম ভালোবাসা!

"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা.."
বিড়বিড় করে এটাই জপছি এখন।।

Saturday, June 7, 2014

আরও বড় বলদ

বন্ধু জার্সির ব্যবসায় নামছে। হরেক রকম জার্সি তার কাছে...
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, জার্মানি বাকরখানি (ক্লাব টাব গুলি) আরও কত কি!!
একেকটার একেক রকম দাম। ৭০০ টাকা থেকে শুরু। কাপড় ভালো, সেলাই ভালো।

কিন্তু অধমের মন ভালো না। অধম খুঁজছিলাম এই হতচ্ছাড়া বাংলাদেশের জার্সি।
ভাবছিলাম, এইসব তো বিশ্বকাপ ফুরাইলে নটে গাছটি মুড়ানোর মতো শেষ।
মাগার দেশেরটা হইলে যখন তখন মন চাইলে পইড়া মাঞ্জা দিয়া ঘুরা যাবে।
চরম মধ্যবিত্ত মানসিকতা যারে বলে, আর কি!

বন্ধু মেসির হোসিয়ারি দেখায়, নেইমারের ছারখার সেলের হিসাব বুঝায়।
ক্লাব ফুটবলের কথা আসায় ফস কইরা মুখ ফসকায় জিগায় ফেললাম,
"মোনেম মুন্নার কোনো জার্সি আছে রে?!"
বন্ধু মুখ তুইলা এলিয়েন দেখতেছে এমন দৃষ্টিতে তাকাইয়া কইলো,
"উফফ নো! মোনেম মুন্না!! সেইটা আবার কে?!"

মৃদু হাইসা বললাম,
"ওই আছিলো একজন ফুটবলার,
যার খেলা দেইখা মুগ্ধ হইয়া কলকাতার মানুষ পর্যন্ত তারে পূজা দিত।
এই ধানমণ্ডি আট নাম্বার সেতুটা তার নামে 'মোনেম মুন্না সেতু'।
এই যেইটার উপর দিয়া রোজ যাই আসি.."

ক্রেতার ভিড় বাড়তেছে দেইখা
বেচাকেনায় ব্যস্ত বন্ধুর থেকে বিদায় নিয়া আসার সময় বললাম,
"পারলে বাংলাদেশের দুইটা জার্সি রাখিস - আবার আইসা নিয়া যামু নে.."

হাত মিলাইয়া চইলা আসতেছি।
বন্ধু উলটো ঘুরে মেসির জার্সি বেচতে বেচতে বিড়বিড় করে বলছে "বলদ"

দুজনেই মাথা ঘুরিয়ে আবার তাকালাম।
কিছুই শুনি নাই এমন ভান করে হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে চলে এলাম..

আসলেই তো!
ভালবাসাটাই তো নিখাদ বলদামি।
আর দেশরে ভালোবাসা তো আরও বড় বলদামি!!
হইলাম বলদ; আরও বড় বলদ।।

Tuesday, May 27, 2014

বাহাদুর!

বন্ধুবর কহিলেন,
"যে চুরি যথাসময়ে বুঝিতে পারো নাই,
তাতো আর চুরি নাই। ওতো বাহাদুরি!"

আর্জেন্টাইন ফুটবলের বড় সমর্থক বন্ধুবরের
স্পষ্ট ইঙ্গিত ম্যারাডোনার হাত দিয়ে করা গোলটির দিকে।

এ কথা শুইনা ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দলের সমর্থক দোস্তো
খেপাচুরিয়াস হইয়া কইলো,
"ওরে চুন্নিরে! চুরির চুরি,
তা নিয়া আবার বাহাদুরি!
নিচে একটা কুত্তা আছে না?
ওই যেইটারে বাহাদুর বইলা ডাকি।
মাঝে মাঝেই ওইটা এটা সেটা চুরি করে!
অমন বাহাদুর আর কি!"

এরপর তো প্রায় হাতাহাতি লাগার উপক্রম!

দুইটারেই থামায়া কইলাম,
"তোরা বাহাদুরের থেকে কম গেলি কিসে?!
খেলাটারে একটা হাড্ডি বানায়া ঠিক বাহাদুরের মতোই
নিজেদের মধ্যে এমন জীবনমরণ কামড়াকামড়ি শুরু করে দিলি!"

পুনশ্চঃ
যারা কোন একটা বিষয় পেলেই এরকম কামড়াকামড়ি শুরু করে দেয়
তাদেরকে নেড়ি কুকুর বাহাদুরের থেকে কোন অংশেই উত্তম দেখি না।
বাহাদুর না হয় নেড়ি কুকুর,
আরেক কুকুরের সাথে কামড়াকামড়িই হয়তো তার প্রিয় কাজ।
কিন্তু মানুষ কিভাবে সামান্য বিষয়ে ওই পর্যায়ে নামে, তাই বুঝি না।

Saturday, May 24, 2014

নেড়ি চক্র

রাস্তায় নেড়ি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে।
মাঝে মাঝে কেউ এঁটো হাড়টাড় খেতে দিলে
তার পক্ষে খানিকটা ঘেউ ঘেউ করে।
কখনো সখনো দলবেঁধে ঘেউ ঘেউ করে।
নিজেরা নিজেরাই ঘেউ ঘেউ করে,
পেছন টেছন শোঁকে। পাত্তা দেই না।
তবে কদাচিত্‍ কামড়াতে এলে, লাশটা
নগর কর্তৃপক্ষের ময়লার গাড়িতে পড়ে থাকে।
আর এইভাবেই টুপ করে শেষ হয়ে যায়
কামড়াতে তেড়ে আসা নেড়ি কুকুরের জীবন।
স্রেফ আইনানুসারে...

আর এভাবেই চলতে থাকে
নেড়ি চক্র।।

Sunday, May 18, 2014

চাষার ছানা বনাম বাঘের পোনা

বাঘের বাচ্চা বলে ডাকলে লোকে
খুশিতে লাফিয়ে ওঠে,
আর চাষার বাছা ডাকলে তাকে
ঘুষিটি বাগিয়ে ছোটে!

হায় রে শাখামৃগ দল!
মিছেমিছি কোলাহল!!

পশুর শাবক হইতে তোমার
নেইকো আপত্তি।
অথচ বললে শিশু, চাষার কিছু
সেইতো বিপত্তি!

আদি পেশা ছিল কৃষি
ভাবলেই আসে হাসি।

ব্যাঘ্রপোনা ছিলে না তুমি,
ছিল না তোমার থাবা!
ছিলে তুমি বাছা কৃষকেরই,
ওই কৃষকই তোমার বাবা।

পুনশ্চঃ
চাষার বাচ্চা বলে গালাগাল(!) দেয়া
তথাকথিত বাঘের বাচ্চাদের প্রতি উৎসর্গকৃত।।

Tuesday, May 13, 2014

শকিং পিচ্চি

বাসায় পিচ্চি খালাতো ভাইটি বেড়াতে এসেছে।

একটু আগে কোত্থেকে হঠাৎ আদুল গায়ে ছুটে এসে বলল,
"ভাইয়া, দেখো দেখো! আমি টেংটু!! হি হি হি.. খি খি খি... খু খু খু...."

কোনমতে তার দুকূল ছাপানো হাসি থামলে জিজ্ঞেস করি,
"কিন্তু ভাইয়া তুমি তো প্যান্ট পড়ে আছ, তুমি তো নেংটু নেই!!"

সে চরম বিরক্ত একটা মুখভঙ্গি নিয়ে বলল, "নেংটু না তো! টেংটু টেংটু!!"

অসহায়ের মতো বললাম, "বুঝি নাই.. ভাইয়া!!"

সে বলে, "উফফ.. তুমি কি বোকা!!"

খোকার মুখে বোকা গাল শুনে একটু সাকা সাকা অনুভূতি হচ্ছিল।
সেই মুহুর্তে ধরাস করে পরনের প্যান্টটাও খুলে পিচ্চি সাকা থেকে পুরাই স্পীকার বানায় দিলো।

খুব বিরক্তমুখে পিচ্চি বলল,
"প্যান্ট না থাকলে নেংটু আর শার্ট না থাকলে টেংটু! তুমি তো কিসসু জানো না!!"

প্যান্টটা এবার একটানে তুলে পিচ্চি বলে,
"এতক্ষণ নেংটু ছিলাম, এখন আবার টেংটু হইছি! বুঝছো?!"

অবাক হইয়া মাথা নাড়াইয়া হ্যাঁ বললাম!
ভাবতেছিলাম নার্সারির পুলাপাইন এত বিটলা হইছে ক্যামনে?!

এরপরের কথায় তো ডাইরেক্ট মার্ডার হইয়া গেলাম!

পিচ্চি গম্ভীর গলায় বয়ান দিল,
"ইসস.. তুমি তো দেখি কিসসু জানো না!! এজন্যই তো তোমার বিয়া হয় না!!!"

এই বইলা যেমনে ফুড়ুত করে আসছিল, ঠিক তেমনে ফুড়ুত করে চলে গেল।
প্রথমে সাকা, এরপর স্পীকার আর সবশেষে মার্ডার হইয়া পইড়া রইলাম - এই নিঠুর দুনিয়ায়..

শেষমেশ, নার্সারির পুলার হাতে মার্ডার হইলাম..
এই আফসোস করতে করতে নিজের কাজে মন দিলাম!

Friday, March 7, 2014

গল্পটা সত্যি না হলেও পারতো

৭ই মার্চ, ২০১৪
পড়ন্ত দুপুরে হাকিম চত্বরে পা ঝুলিয়ে বসে গুনগুন করছিল ছেলেটি।
দূর থেকে দুই বন্ধুকে এগিয়ে আসতে দেখে স্মিত হেসে তাদের স্বাগত জানায় সে।
এক বন্ধুর হাতে সুন্দর প্যাকেটে সদ্য কেনা একটি বই।
বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে দেখে ছেলেটি পকেটে হাত দেয়।
পকেট হাতড়ে ছেলেটির ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
সে বন্ধুদের বলে,
"চল! একটা মজার খেলা খেলি.. সাথে থাক, আর যা বলি - সায় দিয়ে যা..."

সদা ফুর্তিবাজ ইয়ারবন্ধুর এ আহবানে না করার কোন কারণ খুঁজে পেল না বাকি দু বন্ধু।

সামনে দিয়েই যাচ্ছিল প্রায় সমবয়সী দুজন পথচারী।
তাদের কাছে গিয়ে ছেলেটি রেডিও আরজে'দের মতো করে বলল,
"ভাই, আমরা একটা স্ট্রীট গেম খেলছি।
গেম'টা শুরু করার আগে সেটা কেমন পাবলিক রেসপন্স পাবে,
তার একটা পরীক্ষামূলক জরিপ করা হচ্ছে আজ। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে জরিপ,
তাই আজ আপনাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক খুব সিম্পল একটা প্রশ্ন করবো।
সঠিক উত্তর দিতে পারলে আপনি উপহার হিসেবে পাবেন এই বইটি।"
বলে ছেলেটি বন্ধুর সদ্য কেনা বইটি তাদের দেখায়।

"আর সঠিক উত্তর না দিতে পারলেও সমস্যা নেই,
এই জরিপে দেয়া কোন উত্তর আমরা সম্প্রচার করছি না।
সো গাইজ! আর ইউ রেডি?"

এ কথায় দু পথচারীই হেসে রাজি হয়।
এবার ছেলেটি প্রশ্ন করে,
"মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যে সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ, তাদের নামগুলো কি কি?"
পথচারী দুজনেই একে অপরের দিকে তাকায়,
কিন্তু একটার বেশি নাম কেউই বলতে পারে না।

ছেলেটি এবারে পথচারী দু'জনকে ধন্যবাদ দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।
সমবয়সী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষকে সে এই একই প্রশ্ন করে।

পড়ন্ত দুপুর থেকে বিকেল হয়ে যায়,
বিকেল গড়ায় সাঁঝে!
কিন্তু কেউ জানে না সে নাম যে হায়,
এতো মানুষের মাঝে!!

সন্ধ্যাবেলায়,
দৃশ্যপটে আবারও সেই হাকিম চত্বর।
এবারে তিন বন্ধুই পা ঝুলিয়ে বসে আছে।
ঝিরিঝিরি বাতাস সাথে আশেপাশের নানা কোলাহলের মধ্যেও
তিনজনের মাঝে অস্বস্তিকর নীরবতা বিদ্যমান।

অনুচ্চস্বরে সেই ছেলেটি আনমনে বলে উঠলো,
"হে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, মোস্তফা কামাল, মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মুন্সি আব্দুর রউফ, নূর মোহাম্মদ শেখ, হামিদুর রহমান! ক্ষমা করে দিয়েন। আপনাদের নামটুকু পর্যন্ত ভুলে যাবার জন্যে..."

বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল,
"বইটা দেখেই চিন্তাটা মাথায় এলো, ভাবলাম খেলি একদান।
বইয়ের দামটা পকেটে আছে দেখে মাথার চিন্তাপোকাটা
এই খেলার ভাবনাটাকে আরও উসকে দিল..
পোকাটাকে মেরে ফেলবো ভাবছি..
বিবেকের কামড় খেতে আর ভালো লাগে না, বড্ড জ্বালা!"

এই বলে হাতের বইটা বন্ধুর দিকে এগিয়ে দিলো, "নিয়ে যা..."

বইটা ফিরিয়ে দিয়ে বন্ধুটি বলল,
"খেলায় তিনজনই ছিলাম, শর্ত মেনেই ছিলাম। বইটা তুইই রাখ।
আমরাও সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে চারজনের বেশি নাম বলতে পারতাম না।
তুই পেরেছিস.. তুই জিতেছিস।"

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলেটি বলে উঠলো,
"এভাবে জিততে চাই নি রে।
এ খেলায় একা জেতা মানে হেরে যাওয়া - সবাইকে নিয়ে হেরে যাওয়া।
জিতি নি, বরং হেরে গেছি বিবেকের কাছে..."

এলোমেলো পায়ে, টলোমলো চোখে ছেলেটি এবারে পা বাড়ায় পথে।

Monday, February 24, 2014

কথোপকথনঃ T20 বিশ্বকাপ থিম সং

বন্ধুবরের সহিত T20 বিশ্বকাপের মিউজিক ভিডিও দেখিতেছিলাম।
ভিডিও খানা শেষ হইয়া যাইবার পরও কারো মুখে রা নাই!

বিব্রতকর নীরবতা ভাঙ্গিয়া বন্ধুবর কহিলেন,
এইক্ষণে গ্রামীণবনগুলি উজাড় হইবার কুফল বুঝিতে পারিলাম।

সুধাইলাম,
কিরূপ? কিরূপ??
রহস্য না করিয়া ভাঙ্গিয়া কহো..

অতঃপর মিটিমিটি হাসিয়া বন্ধুবর কহিলেন,
গ্রাম কে গ্রাম বনজঙ্গল - গাছপালা বিলুপ্ত হওয়ায়,
শাখামৃগের ঝাঁক সব দল বাঁধিয়া আসিয়াছে ঢাকায়।
শহরে এই সময়ে সার্কাসেরও তেমন চল না থাকায়,
উহারা এখন মিউজিক ভিডিও বানায় - নাচে - গায়।
দেশ গ্রামে যাহাকে বাঁদরনাচ বলি, বলি বাঁদরের কিচিমিচি,
উহাই মিউজিক ভিডিওরূপে তোমাদের গিলাইতেছে মিছিমিছি।

বন্ধুবরের কথা শুনিয়া ঢোঁক গিলিলাম।
তৎক্ষণাৎ বন্ধুবর এক হাতা পানি গড়াইয়া তাহা এক হাতে ধরাইয়া;
কহিলেন, এই লহ - পান করো! গিলিতে সহজ হইবে উহা খাইয়া!!!

গুরুচণ্ডালী কথোপকথন - সকলের নাহি সহে অমৃতে অবগাহন।

Tuesday, February 18, 2014

কথোপকথনঃ স্বদেশী পণ্য ব্যবহার

বন্ধুবর কহিলেন,
আদিত্য চোপড়া বড়োই চতুর!
নতুন সিনেমার শুরুতেই একখানা নির্জলা মিথ্যার বেসাতি করিয়া
বেশ ভালো বিজ্ঞাপন করিয়া নিলো!! এখন সকলেই সেই মিথ্যার
প্রতিবাদ করিতে গিয়া ওই সিনেমার ফাও বিজ্ঞাপন করিতেছে!

কহিলাম, তাহলে কি এই মিথ্যার প্রতিবাদও করা যাইবে না?!

বন্ধুবর হাসিয়া কহিলেন,
ওই সিনেমাসহ ভারতীয় জিনিসপত্র বর্জন করিয়া
স্বদেশী জিনিসপত্র ব্যবহার শুরু করিলে উত্তম জাঝা মিলিতো!
কিন্তু করিবে কি পেয়ারতেল বাদ দিয়া টেলিটক ব্যবহার?
কিংবা স্টার পিলাস বাদ দিয়া হলে গিয়া সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত "অগ্নি" সিনেমা দর্শন?!

আমতা আমতা করিয়া কহিলাম,
ওই সিনেমা খানা নিষিদ্ধ করিলেই তো ল্যাটা চুকিয়া যায়!
বাদবাকি এতো হ্যাপা কি জাতির পোষাইবে?

এবার বিকট হাসিয়া বন্ধুবর কহিলেন,
নিষিদ্ধ করিয়া কি চুলখানা যে উল্টাইবা তাহা বিলক্ষণ জানা আছে!
যেখানে মুত্র বিসর্জন নিষিদ্ধ, বাঙ্গালী সেখানে খাড়াইয়া হালকা হইতেই
বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে! তাই ওইসব লোকদেখানো প্রতিবাদ না করিয়া
ভারতকে ভারতের ওষুধই প্রদান কর, স্বদেশী পণ্য ব্যবহার আন্দোলন করো।

Sunday, January 5, 2014

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বিজয় দিবসের তোপধ্বনির মতো
একটানা ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভাঙলো।

মনে হলো,
যেন নিজস্ব ভাষায়
অভিবাদন জানাচ্ছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন..

অভিবাদনের তর্জমাঃ
অনেকটা এমন মনে হলো,
"শুভ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন"
"দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুভেচ্ছা নিন"
"নির্বাচন মোবারক"

খারাপ লাগে নাই!
ধন্যবাদ দিয়ে ফের লেপমুড়ি দিলাম।
ছুটির দিন বলে কথা,
ঘুম দেয়াই যায় একটু বেশি!

ও, ভাববেন না ভোটের দিন
ভোট ফাঁকি দিয়ে পরে পরে ঘুমুচ্ছি!!

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-সিইসির মতো
এই অধমেরও ‘ভোট নেই’!!!

Saturday, January 4, 2014

জাভেদ ওমর বেলিম

যখন জাতীয় দলে খেলতেন তখন কোনভাবেই
তার ওই টুকটাক টাইপের খেলা ভালো লাগতো না।
একদিনের খেলায় মনে মনে বহুদিন চেয়েছি যে
জাভেদ ওমর আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান..

ক্রিকেট বুঝার শুরুর দিকে লারা গিলক্রিস্টদের পাশে
বড় বেশি বেমানান লাগতো জাভেদ ওমর বেলিমকে..

মনে হতো,
এভাবে টুকেটুকে খেলে
একদিনের খেলার সৌন্দর্যটাই নষ্ট করছেন উনি..

তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি।
শিশু হামাগুড়ি দিতে দিতেই হাঁটতে দৌড়োতে শেখে..
ক্রিকেটে তখন বাংলাদেশের শিশুকাল।

এখন সেই দল কিশোর, সে এখন দৌড়োতে জানে,
একদিন হয়তো বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে উড়তেও শিখে যাবে।

সেই উড়ন্ত দলের সাথে জাভেদ ওমরকে
কোচ বা অফিশিয়াল হিসেবে দেখতে পাবো,
এই কামনা রইলো...