Saturday, October 4, 2014

গরুকাহিনী

লিকলিকে, হাড় জিরজিরে, পাছা সরু;
কিনেছি রে ভাই এক খানা দেশী গরু।।

ভাবতেছিলাম ছোটখাট দেশী পশু, তেমন জ্বালাবে না। গোল গোল চোখ দিয়া ড্যাব ড্যাবাইয়া তাকাইয়া মায়া বাড়াবে। বাড়ি নিয়া গিয়া - গোসল দিয়া ঘাস পাতা খাওয়াবো। ভুষি মাড় ইত্যাদি দিয়া যত্নআত্তি করবো। খড়বিচুলি মুঠি কইরা নিয়া নিজের হাতে খাওয়ায় দিবো - একটা মহেশ মহেশ ভাব আসবে। গফুরের মতো মনটা আর্দ্র হইয়া উঠলো - নিজের মধ্যে বেশ গফুর গফুর একটা ভাব চইলা আসছিল।

প্রথম কিছুটা পথ গরু সাব বেশ ভালোই ছিলেন। নিতান্ত শান্তশিষ্ট লেজবিশিষ্ট নিরীহ প্রাণী। অবলা অবলা দৃষ্টিতে তাকায়। তাড়া দেয়া লাগে না, নিজেই সাথে সাথে চইলা আসে। মাঝপথে পেছন থেকে একটা গাড়ির বেমক্কা প্যাপ শুনে এক লাফে গরু নিজেই গাড়ি হইয়া উঠলো।

ভাই রে ভাই! গরু কিনছি না ঘোড়া কিনছি - সেইটা বুঝার আগেই পঙ্খীরাজের গতি লইলো গরু ডা!! নিজেরে সামলামু নাকি গরু সামলামু - লগের লোকজন আগেই পিছায় পড়ছে। কিন্তু হৃদয়ে সদ্য জাগা গফুর হাতের দড়ি ছাড়লো না। (আসল কথাঃ হাতে দড়ি প্যাঁচায় গেছিলো।)

ম্যালা কষ্টে এবং ভারী শরীরের গুণে লিকলিকে গরু তথা পঙ্খীরাজটারে থামাইলাম (জীবনে পরথম এই অধমের বেশি ওজন কুনু কাজে আসিলো!)। ইতিমধ্যে সাথের লোকজন হুড়মুড় কইরা আইসা দড়ি হাত থেকে নিয়া এই ধাওয়া খাওয়া গফুররে রেহাই দিলো।

পিতাজি জ্ঞান দিলেন, "জানের চে গরুর দাম বেশি না রে ব্যাটা!! এমনে গরুর সাথে কেউ দৌড়ায়?!" এখন বাপেরে তো আর বলা যায় না যে গরুর দড়ির আরেক মাথায় প্যাঁচ খাইছিলাম। এমনেই গরু গরু কয়, এরপর কইবো হাটে গেছিলাম একটা গরু আনতে - আনসি এক দড়িতে দুই গরু; একটা মোটা আরেকটা সরু!! ;)

গরুটার জন্য মায়া লাগতেছে, কোন গফুরের আঙ্গিনা - গোয়াল খালি কইরা নিয়া আসলাম কে জানে?! হয়তো সন্তানসম যত্নে পালতো গরুটারে। গরুটারে গোসল দিয়া খাওয়াইলাম। একটু দুষ্ট পোলাপাইনরে মা বাপ ক্যান বেশি ভালবাসে সেইটার এক কণা বুঝলাম। ভালো জ্বালাইছে তো, আবার ঠাণ্ডা হইয়া পাশেও ঘেঁষতেছে। আদর এ পাইবে না তো কুন গরু পাইবে?! ছোটবেলার কথা মনে পড়লো, একসময় গরু দেখলেই মহেশ মহেশ লাগতো। প্রায়ই কোরবানির আগে ভাবতাম, এই গরুটারে কোরবানি না দিলে হয় না?! অনেকদিন পর আবার সে রকম মনে হইলো!!

মহেশ মহেশ ভাবওয়ালা গরুটার পাশে নিজেরে গফুর গফুর লাগতেছে।
তা লাগুক, তবু গৃহীত হউক এই আত্মত্যাগ।

Friday, October 3, 2014

ছাগভাষা সমাচার কিংবা একটি ফাঁপরের গপ্প

অতঃপর ছেলেটি বলল তাঁর লেখা নাকি অনেক পত্রিকায় যায়, অনেক লোক সেটা নকল করে চারটে খায়। ফাঁপরে অস্থির এক ভাই পত্রিকার একটা লেখা দেখতে চাইলে অবশ্য ছেলেটি "অনেক পত্রিকায় আসে - নির্দিষ্ট করে মনে করা কঠিন" ইত্যাদি বলে দিল।

কপালফেরে কিংবা ভাগ্যদোষে খোমাবইয়ে ছেলেটির কিছু চর্বিত চর্বণ ধাঁচের লেখা দেখেছিলাম। তার জেরে এই অধমকেই সাক্ষী মেনে বসলো ছেলেটি। কান চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দিলাম, "ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁ, ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁঅ্যাঁহ..."

আড্ডার সবাই হাত পা ঝাড়া দিয়ে এই দিকে ফিরলো। চোখেমুখে কৌতুক কিংবা কৌতূহলের ঝিলিক। ঘটনা কি, জানতে উৎসুক সবাই। সবার আগ্রহ দেখে খেই হারিয়ে ফেলা ফাঁপরা ছেলেটি আবার সাক্ষ্য দিতে বলায় আবার বললাম, "ম্যা.. ম্যাঅ্যাঁ... ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁহ...."

এক ভাই ঘটনা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো, "হইলো কি তোমার?!"

বললাম, "ভাই ছাগলরে ছাগলের ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করতেছিলাম যে ফাঁপর টাপর ফোকলা ফোঁপরে এই অধম নাই! এখন ছাগলের ভাষা বিশেষ না জানায় ওই ম্যা ম্যা দিয়াই কাজ চালানোর চেষ্টা করতেছি।"

এই বলেই আবার ফাঁপরা ছেলেটির দিকে ফিরে বললাম, "ম্যাঅ্যাঁ, ম্যাঅ্যাঁহ, ম্যাঅ্যাঁঅ্যাঁহহ..."
এতক্ষণ সবাই ফাঁপরের গুমোটে হাঁসফাঁস করছিল, এবারে সম্মিলিত নির্মল হাসিতে সে গুমোট কেটে গেল।

এইটা বেশ কিছুদিন আগের কথা। আজ পর্যন্ত পত্রিকা বা কোথাও (খোমাবই বাদে) কোন লেখা ফাঁপরা ছেলেটি দেখাতে পারে নি। সকাল থেকে নীচে দুই জোড়া ছাগলের মিলিত ডাকাডাকিতে ঘুমের দফা রফা। একবার মনে হয়েছিল ছাগলের ভাষা জানা থাকলে খানিক কষে বকে দিতাম। এরপরই মনে পড়লো সেইদিনের ফাঁপরা ছেলেটির কথা.. বিরক্তি নিমেষে উধাও হয়ে মুচকি হাসিতে দিন শুরু হলো...