Wednesday, June 25, 2014

শাস্তি

রহমান সাহেবের বয়স হয়েছে। এখন আর গায়ে আগের মতো তেমন জোর নেই। তবে মাথায় কূটবুদ্ধির মাশাল্লাহ কমতি নেই, বরং ম্যালাদিনের অভিজ্ঞতায় তা আরও ঋদ্ধ হয়েছে। যৌবনের আকাম কুকামগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো রক্তচাপ বেড়ে যায় রহমান সাহেবের। কি সব দিন ছিল সেগুলো.. মাঝে মাঝে ওসব ভেবে পুলকিত হন তিনি। নেহায়েত বয়েস হয়ে গেছে বলে আফসোস যে হয় না, তা নয়। তবে এখনকার কাজগুলো হয় নিখাদ বুদ্ধির.. কাঁচাবয়সের কাঁচাকাজ নয়। এই ভেবে তৃপ্ত থাকেন তিনি।

একমাত্র ছেলে নিজাম বিদেশ থেকে উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসেছে বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য। ছেলের বউ আর ছোট্ট নাতিকে নিয়ে বিপত্নীক রহমান সাহেবের সুখের সংসার। এর মধ্যে একদিন নিজাম থমথমে মুখে অবেলায় ফিরে আসে কর্মস্থল থেকে। কি এক কাগজ হাতে বাবার সামনে গিয়ে জানতে চায়, মতির মা কে? কি তার মেয়ের বৃত্তান্ত? মতির আদ্যোপান্ত জানার আগ্রহ নিজামের। রহমান সাহেবের রক্তচাপ বেড়ে যায়, তিনি নিরুত্তর থাকেন। অসুস্থতার ভান করে এড়িয়ে যেতে চান নিজামকে। কিন্তু নিজাম হাল ছাড়ে না, সে উত্তর খুঁজতে থাকে।

"মতির মা" নাম শুনেই রহমান সাহেবের মনে পড়ে যায় অনেক বছর আগের কথা। তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, একটা ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে তার বিপুল প্রতাপ। মতি ছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। সাধারণ ছাত্রদের অধিকার চাইবার অপরাধে(!) তিনি মতিকে খতম করার নির্দেশ দেন। আর তার সাথে খুনের চাক্ষুষ সাক্ষী আর উপরি পাওনা হিসেবে ভোগে যায় মতির ছোটবোন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় মেয়েটিকে। বিধবা মতির মা বাড়ীর পাশে ছোট্ট একটা মুরগীর খামার করে সংসার চালাতেন। চরম আক্রোশে সেটিও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সব হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিল মতির মা। পুরো বিষয়টাই রহমান সাহেব টাকা আর রাজনৈতিক প্রভাব দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। নিজেদের করা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন আর অগ্নিসংযোগকে বানিয়ে ফেলেছিলেন সাধারণ হানাহানির মামলা। আর এই চরম অপরাধগুলোকে তিনি বলেছিলেন মতিদের অভ্যন্তরীণ গণ্ডগোল। ঘোষণা দিয়েছিলেন, অচিরেই চক্রান্তকারীদের খুঁজে বের করে ব্লা ব্লা ব্লা... ব্লা ব্লা ব্লা...

হালে সেই অপরাধের কিছু প্রমাণ কিভাবে কিভাবে যেন বেরিয়ে এসেছে। নিজাম সেগুলোরই কিছু জানতে পেরেছে। কিছু সচেতন মানুষও জানতে পারে এই অন্যায়ের কথা, অতঃপর শুরু হল মামলা। রহমান সাহেব সুতো টানলেন। মামলা ঝুলে গেল। তবে মানুষ আর আগের মত দমে গেল না। কিছু মানুষ জেগে উঠলো, প্রতিবাদ করলো। গিয়ে দাঁড়ালো সব হারানো মতির মার পাশে। রহমান সাহেবের শত প্যাঁচেও সেটা দমলো না। এভাবে না পেরে রহমান সাহেব মোক্ষম চাল চাললেন। নিজের শয়তানি বুদ্ধির সবটুকু আর বিপুল অর্থ খরচ করে তিনি মামলা ঝুলিয়ে দিলেন অনির্দিষ্টকালের জন্য।

নিজাম গোছগাছ করছে, সে চলে যাবে দেশ ছেড়ে চিরতরে। নিজামের স্ত্রী তার বাবার বাড়ীতে বিদায় নিতে গেছে, নিজাম তাকে সেখান থেকেই তুলে নেবে বিমান বন্দরের পথে। বের হবার আগে পথ আগলে দাঁড়ালেন রহমান সাহেব, তার রক্তচাপ বেড়ে গেল। তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন, নিজামকে তার পাশে থাকতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু নিজাম শুনলো না, সে এভাবেই শাস্তি দেবে তার আপাদমস্তক অপরাধী বাবাকে। ফাঁসি তো তার এখতিয়ারে নেই, তাই সে দেবেঃ পরিবার-পরিজনহীন যাবজ্জীবন।



কৈফিয়তঃ এমনিতেই আবর্জনা জাতীয় গল্প লিখি। কিন্তু তারপরেও এই লেখাটা কেন জানি আরও বেশি আবর্জনাময় হইছে। এ পর্যন্ত এতোটা আবর্জনাময় কিছু আর লিখি নাই। জীবিত বা মৃত নির্বিশেষে, বিশেষত মতিউর রহমান নিজামী কিংবা তাহার রক্তচাপের সাথে এই গল্পের কোথাও কোন সম্পর্ক নেই। যদি এই আবর্জনার ভেতরে কেউ মতিউর রহমান নিজামী অথবা তাহার রক্তচাপ সম্পর্কিত কিছু খুঁজে পায় তবে সেইটা একান্তই কাকতালীয় বিষয় আশয়। এতে এই আবর্জনার মালিকের কোথাও কোন প্রকার কৃতিত্ব নাই।
কৈফিয়তটি শেষ হলো।।

Sunday, June 15, 2014

দিবস এক দিনের, আর বাবা সারাজীবনের

অনলাইনে এসে জানলাম আজ বিশ্ব বাবা দিবস।
তো বাবার সাথে চিরকালই অধমের ভালো বাঁশা বাঁশির সম্পর্ক।
মানে উনি ভালো ভালো বাঁশ দেন, আর অধম অধোবদনে লই।
এই আর কি বিষয়টা!!

যাই হোক,
আজ ভাবলাম বাবারে বাবা দিবসের শুভেচ্ছা টুভেচ্ছা জানাই!
আর কতকাল ক্ষ্যাত থাকবো!! এট্টু আধটু আধুনিক না হয় হলাম।
গিয়ে দেখি, সারাদিন খাটা খাটুনির পর আব্বু চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছেন।
সামনে দাঁড়িয়ে একটু গলা খাঁকারি দিলাম, বাপে চোখ তুলে তাকালেন।

ক্লান্ত জিজ্ঞাসু লাল লাল চোখের সামনে গুলিয়ে ফেললাম।
কি বলবো কি বলবো না, কই যাব আর কই যাব না।
সব মিলিয়ে হয়ে গেল পদ্মা মেঘনা যমুনা।

জিজ্ঞেস করে বসলাম,
"আব্বা, ক্যামন আছেন?! মানে, ভালো আছেন?!"

নগদে বললেন, "ভালো আছি, আপনি ভাত খাইছেন? বাবা?!"
সব গুলিয়ে টুলিয়ে ভালো একটা বাঁশের প্রত্যাশায় ছিলাম,
এইরকম অসীম ভালোবাসার দুরাশা কস্মিনকালেও করি নাই।
ফের ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম। কোনমতে, চিবিয়ে চাবিয়ে বললাম,
"জি খেয়েছি, আপনি খাইছেন?!"

আব্বা এবার অসম্ভব নরম স্বরে বললেন,
"হ্যাঁ, খাওয়া হইছে, ভালোও আছি।
যান বাবা, ঘুমাইতে যান। রাত হইছে।"

মুহুর্তেই বুকের ভিতরে সব ভেঙ্গে চুরে একটা নদী তৈরী হলো,
হয়েই নদীটা কুলকুল করে বয়ে যেতে লাগলো।
আর এক টুকরা আকাশ তৈরী হলো, আকাশ ভরা জ্যোৎস্না।
সেই জ্যোৎস্নায় ভিজে ভিজে নদীর তীর ধরে ফিরে আসলাম।
ইসস, ভালোবাসা এতো সুন্দর হয় ক্যান গো মাবুদ?!

জানাতে গিয়েছিলাম এক চিমটি শুভেচ্ছা,
সেইটা না দিয়েও বরং নিয়ে ফিরে এলাম
এক আকাশ নদী জ্যোৎস্নাসমেত অসীম ভালোবাসা!

"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা.."
বিড়বিড় করে এটাই জপছি এখন।।

Saturday, June 7, 2014

আরও বড় বলদ

বন্ধু জার্সির ব্যবসায় নামছে। হরেক রকম জার্সি তার কাছে...
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, জার্মানি বাকরখানি (ক্লাব টাব গুলি) আরও কত কি!!
একেকটার একেক রকম দাম। ৭০০ টাকা থেকে শুরু। কাপড় ভালো, সেলাই ভালো।

কিন্তু অধমের মন ভালো না। অধম খুঁজছিলাম এই হতচ্ছাড়া বাংলাদেশের জার্সি।
ভাবছিলাম, এইসব তো বিশ্বকাপ ফুরাইলে নটে গাছটি মুড়ানোর মতো শেষ।
মাগার দেশেরটা হইলে যখন তখন মন চাইলে পইড়া মাঞ্জা দিয়া ঘুরা যাবে।
চরম মধ্যবিত্ত মানসিকতা যারে বলে, আর কি!

বন্ধু মেসির হোসিয়ারি দেখায়, নেইমারের ছারখার সেলের হিসাব বুঝায়।
ক্লাব ফুটবলের কথা আসায় ফস কইরা মুখ ফসকায় জিগায় ফেললাম,
"মোনেম মুন্নার কোনো জার্সি আছে রে?!"
বন্ধু মুখ তুইলা এলিয়েন দেখতেছে এমন দৃষ্টিতে তাকাইয়া কইলো,
"উফফ নো! মোনেম মুন্না!! সেইটা আবার কে?!"

মৃদু হাইসা বললাম,
"ওই আছিলো একজন ফুটবলার,
যার খেলা দেইখা মুগ্ধ হইয়া কলকাতার মানুষ পর্যন্ত তারে পূজা দিত।
এই ধানমণ্ডি আট নাম্বার সেতুটা তার নামে 'মোনেম মুন্না সেতু'।
এই যেইটার উপর দিয়া রোজ যাই আসি.."

ক্রেতার ভিড় বাড়তেছে দেইখা
বেচাকেনায় ব্যস্ত বন্ধুর থেকে বিদায় নিয়া আসার সময় বললাম,
"পারলে বাংলাদেশের দুইটা জার্সি রাখিস - আবার আইসা নিয়া যামু নে.."

হাত মিলাইয়া চইলা আসতেছি।
বন্ধু উলটো ঘুরে মেসির জার্সি বেচতে বেচতে বিড়বিড় করে বলছে "বলদ"

দুজনেই মাথা ঘুরিয়ে আবার তাকালাম।
কিছুই শুনি নাই এমন ভান করে হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে চলে এলাম..

আসলেই তো!
ভালবাসাটাই তো নিখাদ বলদামি।
আর দেশরে ভালোবাসা তো আরও বড় বলদামি!!
হইলাম বলদ; আরও বড় বলদ।।